ঘরের কোণে থাকা ছোট্ট একটি ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরকে করে তোলে স্নিগ্ধ। শুধু সৌন্দর্যবর্ধনই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো ইনডোর প্ল্যান্ট। ঘরের ভেতর থাকা গাছ উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। বেশির ভাগ ইনডোর প্ল্যান্টই ছায়াবান্ধব হয়ে থাকে, তাই ঘরের ভেতরের পরিবেশেই স্বাচ্ছন্দ্যে ডালপালা মেলতে পারে এসব গাছ। আবার পোথোস, স্পাইডার প্ল্যান্ট ও স্নেক প্ল্যান্টের মতো গাছগুলো শুধু পানিতেও দিব্যি বেঁচে থাকে।
সৌন্দর্যবর্ধনই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো ইনডোর প্ল্যান্টকৃতজ্ঞতা: তাসনিম কবির, ছবি: কবির হোসেন
ঘরের কোনে থাকা গাছগুলোর সারা বছরই কমবেশি পরিচর্যা প্রয়োজন। শীতকালে প্রকৃতি অনেকটাই বদলে যায়। হঠাৎ করেই ঘরের পরিবর্তিত আর্দ্রতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয় বলে এ সময় ইনডোর প্ল্যান্টেরও বাড়তি যত্নের দরকার হয়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানপালন বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদা খাতুনের কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক শীতকালে ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নেওয়ার উপায়।
১. ইনডোর প্ল্যান্টে পানি দেওয়ার বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। গাছের ধরন অনুযায়ী পানির চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন স্নেক প্ল্যান্টে সপ্তাহে দু-এক দিন পানি দিলেই ভালোমতো বেঁচে থাকে। আবার অনেক গাছের বেড়ে উঠতে নিয়মিত পানির প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণত যখন ইনডোর প্ল্যান্টের গোড়ার মাটি শুকিয়ে যাবে, তখনই গাছে পানি দিতে হবে। শীতকালে প্রকৃতিতে আর্দ্রতা অনেকটা কমে যায়, তাই ঘরের ভেতর থাকা গাছগুলোর আর্দ্রতা ধরে রাখতে মাটিতে কিছুটা কোকো পিট ব্যবহার করতে পারেন। এটি গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ধারণ করতে পারে। গাছের গোড়াতেও পচন ধরে না।
২. প্রকৃতিতে জীর্ণভাব নিয়ে আসে শীত। মনে হয় গাছপালা যেন ঝিমিয়ে আছে। এ সময় গাছের বৃদ্ধি অন্যান্য সময়ের চেয়ে কম হয়। অনেক সময় দেখা যায়, গাছের কিছু পাতা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে। এ সময় গাছের মরা ডাল-পাতাগুলো ছেঁটে দেওয়া উচিত।
৩. ঘরের ভেতরে থাকা আসবাবের মতোই ইনডোর প্ল্যান্টেও কিছুদিন পরপর ধুলাবালু জমে। পাতার ওপর দীর্ঘদিন ধরে জমা ধুলাবালু গাছের সালোকসংশ্লেষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই পাতায় ধুলা জমলে ভেজা কাপড় দিয়ে পাতাগুলো মুছে দিতে হবে।
ইনডোর প্ল্যান্টের বেড়ে উঠতে খুব বেশি আলো-বাতাসের প্রয়োজন হয় নাছবি: কবির হোসেন
৪. ইনডোর প্ল্যান্টের বেড়ে উঠতে খুব বেশি আলো-বাতাসের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু একেবারেই আলো-বাতাস না পেলে গাছগুলো সতেজভাব হারাতে পারে। এ ছাড়া গাছে ফাঙ্গাসের আক্রমণও হতে পারে। তাই সপ্তাহে এক দিন বা ১৫ দিনে অন্তত এক দিন ইনডোর প্ল্যান্টগুলো কিছুক্ষণের জন্য রোদে রাখুন।
৫. শীতকালে অনেক গাছই মিলি বাগ নামক ছোট ছোট সাদা রঙের একধরনের পোকার আক্রমণের শিকার হয়। এই পোকা দমনে ‘ইমিটাফ’ নামক ওষুধ বেশ কার্যকরী। এ ছাড়া শীতে ছত্রাকের প্রকোপও বেড়ে যায়। ছত্রাকের আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পেতে গাছে ‘ম্যানসার’ নামক ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করতে পারেন।
অনেকে মনে করেন, শীতকালে গাছের প্রয়োজন উষ্ণ পানি। কিন্তু এটি একদমই ভুল ধারণা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানপালন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম গাছের জন্য সব সময় কক্ষ তাপমাত্রার পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তিনি জানান, বেশি গরম বা ঠান্ডা পানি গাছের ক্ষতি করতে পারে, এমনকি গাছ মারাও যেতে পারে।