ওজন কমাতে উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত উদ্যম বজায় রাখাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। ‘টুকিটাকি’ কিছু ভুলে নিজের কাঙ্ক্ষিত ওজনে পৌঁছানো দুরূহ হয়ে ওঠে। কেউ নাশতা বাদ দেওয়ার ভুল করেন, তো কেউ আবার ‘অবাস্তব’ লক্ষ্য নির্ধারণ করে বসেন। নিতান্তই ‘সাদামাটা’ এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন, যেগুলোর কারণে আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হতে পারেন।
ওজন কমানোর অর্থ কেবল কিছু খাবার বাদ দেওয়া আর জিমে সময় কাটানোই নয়; বরং পুরো জীবনধারাতেই আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে।
সময়মতো খেতে হবে, ঘাম ঝরাতে হবে, আবার ঘুমাতেও হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের ‘সাধারণ’ কিছু ভুল সম্পর্কে জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
‘হালকা স্ন্যাকস’ হিসেবে খাওয়া হলেও ক্যালরির হিসেবে শিঙাড়া কিন্তু মোটেও হালকা নয়
সকালের খাবার বাদ দেওয়া
সকালের খাবার থেকেই সারা দিনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরির একটা বড় অংশ গ্রহণ করা উচিত। সকালে না খেলে আপনি সারা দিনের কাজের উদ্যম পাবেন না। শরীরচর্চা করতে গিয়েও ক্লান্তি বোধ করবেন। অ্যাসিডিটির সমস্যায়ও ভুগবেন।
সকালে খাবার না খেয়ে বেলা বাড়ার পর এক-দুটি শিঙাড়া-পুরি কিংবা মেয়োনিজ-মাখন দেওয়া কোনো খাবার খেয়ে নেওয়াটা মোটেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। এতেও ওজন বাড়ে।
তিন বেলা খাবার মাঝে ‘স্ন্যাকস’ না খাওয়া
সকাল, দুপুর ও রাত তিনবেলা হয়তো ঠিকঠাক খাবার খেলেন। তবু মাঝের সময়টায় ‘স্ন্যাকস’ না খেলে ক্ষুধার তাড়নায় কষ্ট পাবেন আপনি। ওজন কমানোটাকে অত্যন্ত কষ্টকর এক বিষয় বলে মনে হবে। আর ওজন কমাতে দীর্ঘ মেয়াদে সাফল্যও পাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে।
খাবারে সস–জাতীয় কিছু গ্রহণ করলে বাড়তি ক্যালরি যুক্ত হয়
‘স্ন্যাকস’-এর ক্যালরির হিসাব না রাখা
স্ন্যাকস হিসেবে গ্রহণ করা ‘হালকা’ খাবার যাতে ক্যালরির দিক থেকেও ‘হালকা’ হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন ‘সহজ’ নাশতা, যা হাতের কাছের দোকানেই পাওয়া যায়, তা অবশ্যই এড়িয়ে চলুন; বরং স্ন্যাকস হিসেবে আপনাকে স্বাস্থ্যকর কিছু খেতে হবে। ফলমূল, কাঁচা সবজির সালাদ, বাদাম প্রভৃতি বেছে নিতে পারেন।
মেয়োনিজ, কেচাপ বা সস গ্রহণ
ধরা যাক, আপনি বাড়িতে স্যান্ডউইচ বানিয়েছেন, যাতে ক্যালরির মাত্রা খুব বেশি নয়। কিন্তু এটিকে সুস্বাদু করে তুলতে সঙ্গে যদি কেচাপ বা সস–জাতীয় কোনো কিছু গ্রহণ করেন, তাহলে কিন্তু মুশকিল। এভাবেও বাড়তি ক্যালরি যুক্ত হয়ে যেতে পারে আপনার খাবারে। সালাদ তৈরির সময় মেয়োনিজ ব্যবহার করলেও ঘটে একই ব্যাপার। এ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
ওজন কমাতে চাইলে ধীরে ধীরে চায়ে চিনি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে
ভুল লক্ষ্য নির্ধারণ
খুব বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন না; বরং সপ্তাহে আধা কেজি ওজন কমানোর লক্ষ্যে শুরু করতে পারেন ওজন কমানোর ‘মিশন’; বড়জোর এক কেজি। কতটা ওজন কমাতে চান, তা যেমন একধরনের লক্ষ্য, তেমনি ওজন কমাতে আপনি কোন কোন কাজ করতে চান, তা আরেক ধরনের লক্ষ্য। ধরা যাক, আপনি চায়ে চিনি খাওয়ার অভ্যাস ধীরে ধীরে ছেড়ে দেবেন কিংবা রোজ ৩০ মিনিট খেলাধুলা করবেন বলে ঠিক করলেন।
এই লক্ষ্যগুলোও বাস্তবসম্মত রাখুন, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে আপনার পক্ষে যতটা বদলানো সম্ভব। সপ্তাহ শেষে, মাস শেষে হিসাব করে দেখুন, এসব লক্ষ্যের কতটা পূরণ করতে পারলেন। সব সময় যে ওজনের লক্ষ্যে আপনি চাইলেই পৌঁছাতে পারবেন, তেমনটা কিন্তু নয়। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনধারার লক্ষ্যে পৌঁছানো জরুরি। তাতে ধীরে ধীরে ওজনও কমবে।
শুরুতেই খুব বেশি ওজন কমানো
ওজন কমানোর শুরুর দিকেই অতি উৎসাহে অনেকটা ওজন কমিয়ে ফেলা ঠিক নয়। হঠাৎ অনেকটা ওজন কমাতে গিয়ে আপনি যদি ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে দেন, তাহলে দেহের বিপাক হার কমে যেতে পারে। পরে স্বাভাবিক ক্যালরি গ্রহণ করলেও আপনার ওজন বাড়তে পারে এই ধীর বিপাক হারের জন্য।
সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে ওজন মাপা ভালো।
ভুল সময়ে ওজন মাপা
ঘন ঘন ওজন মাপতে নেই। ওজন মাপবেন সপ্তাহে বড়জোর একবার। তবে দিনের বিভিন্ন সময় কিন্তু আমাদের ওজনের তারতম্য হয়। তাই এক দিন সকালে মাপলেন, তো আরেক দিন রাতে কিংবা এক দিন খাওয়ার আগে, তো এক দিন খাওয়ার পরে এমনটা করা যাবে না।
তাতে নিজের ওজন সম্পর্কে ভুল ধারণা পাবেন। সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে ওজন মাপা ভালো।