সম্প্রতি বাংলাদেশের ঋণমান ‘বি-ওয়ান’ থেকে কমিয়ে ‘বি-টু’তে এনেছে মুডিস। নতুন রেটিংস প্রকাশ করে মুডিস বলছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পর সরকার পরিবর্তনের ফলে উচ্চ রাজনৈতিক ঝুঁকি, নিম্ন প্রবৃদ্ধি সরকারের তারল্যের ঝুঁকি, বৈশ্বিক ভঙ্গুরতা এবং ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
ঋণমান নির্ণয়কারী মার্কিন সংস্থা মুডিস রেটিংয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘দ্বিতীয় স্টেট অব ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট’ ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন। বিদেশী বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা নিয়েও ওয়েবিনারে আলাপ করেছেন ব্যাংকটির গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহজ করছে ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আগাম অনুমোদন ছাড়াই মুনাফা ফিরিয়ে নিতে পারছেন বলে জানান গভর্নর।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ঋণমান ‘বি-ওয়ান’ থেকে কমিয়ে ‘বি-টু’তে এনেছে মুডিস। নতুন রেটিংস প্রকাশ করে মুডিস বলছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পর সরকার পরিবর্তনের ফলে উচ্চ রাজনৈতিক ঝুঁকি, নিম্ন প্রবৃদ্ধি সরকারের তারল্যের ঝুঁকি, বৈশ্বিক ভঙ্গুরতা এবং ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দুর্বল প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে ঘাটতি পূরণের জন্য স্বল্পমেয়াদি অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর ক্রমশ নির্ভরশীল করছে এবং এর ফলে তারল্য ঝুঁকি বাড়ছে। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের পর কিছুটা বাড়তে থাকলেও বর্তমানে বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্থিতিশীল। কিন্তু মুডির রেটিংসে বলা হচ্ছে অবনমন ঘটেছে। যেখানে অর্থনৈতিক সূচকগুলোয় আমরা এগোচ্ছি। এ কারণে মুডিসের মূল্যায়নে আমাদের আপত্তি আছে। সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে ধীরে যা আরো কিছুদিন গেলে বুঝা যাবে। মুডিস রেটিংয়ে যেসব তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো পুরনো, তাদের তথ্য হালনাগাদ নয়। তাদের বলব, আমাদের এখানে আসুন। সিঙ্গাপুরে বসে অন্য কারো কথা শুনে নয়, বাংলাদেশে এসে মূল্যায়ন করুন।’
সম্প্রতি ব্যাংক কর্তৃক নীতি সুদহার বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের একটু কষ্ট হচ্ছে স্বীকার করে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘আশা করি ব্যবসায়ী সমাজ এটা বুঝবেন, ব্যবসা একটু কঠিন হলেও তারা মেনে নেবেন। পরিস্থিতিকে গ্রহণ করবেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এটি করা দরকার ছিল।’
এ কষ্টকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ সহনীয় হতে সাধারণত ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শ্রীলংকার গ্রহণ করা ব্যবস্থাগুলোর উদাহরণ দেন তিনি। সাময়িকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে জটিল করে তুললেও পর্যায়ক্রমে সহনীয় হয়ে আসবে বলে আশা করেন গভর্নর।
ব্যাংকিং খাতে আমানতকারীদের আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ জানতে চাওয়া হলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আস্থা ফেরাতে প্রথমত সুশাসন ও জবাবদিহিতার প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অপারেশনাল (পরিচালনা) সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে।’
গভর্নর আরো বলেন, ‘অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার বাইরেও কিছু বিষয় আছে যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডলারের বাজার সরবরাহ চ্যানেল এখন অনেকটা স্বস্তিদায়ক। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি) এখন সন্তোষজনক অবস্থানে যাচ্ছে। এস আলম বা বেক্সিমকোর মতো বেশিরভাগ ব্যক্তিগত কোম্পানির কাছে পেমেন্টগুলো আটকে রয়েছে যা সমাধান হতে সময় প্রয়োজন।’
খেলাপী ঋণের পরিমাণ ব্যাংকিং খাতে দিন দিন বাড়ছে। এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে ব্যাংকিং খাতে এসএমই ঋণ গ্রহণযোগ্য স্থানে যায়নি। অনেক ব্যাংক এসএমই খাতে গুরুত্ব দেয়ায় তাদের খেলাপির হার কমে গেছে।’ এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের বেলায় গুণগত মান নিশ্চিত করতে সতর্ক করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। বেসরকারি খাতের বড় একটি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকও তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এ ব্যাংকটি এক সময়ে অনেক ভালো ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সার্পোট দিচ্ছে, আশা করি তারা সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে। এরপর অন্যান্য শরীয়াহ ব্যাংকগুলো এর কাছ থেকে সার্পোট পাবে।’